গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলা চালায় রাশিয়া। ওই হামলার শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার মধ্যে ছিল গ্যাস, তেল ও কয়লার মতো অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানিও।
তবে মস্কোকে শাস্তি দিতে চাইলেও— বাধ্য হয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে দেশটির তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো।
বুধবার (৩০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার কাছ থেকে আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি গ্যাস কিনেছে ইউরোপের দেশগুলো।
ম্যারিন ও ট্যাংকার ট্রাফিকের খবর রাখা বিশ্লেষক সংস্থা ক্যাপলার জানিয়েছে, এ বছর রাশিয়া এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ এলএনজি বিক্রি করেছে তার অর্ধেকেরও বেশি কিনেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।
ইউরোপে রাশিয়ার এলএনজি আসে স্পেন ও বেলজিয়াম হয়ে। এ দুটি দেশই এ বছর এখন পর্যন্ত চীনের পর রাশিয়ার গ্যাস বেশি কিনেছে। এরপর সেগুলো অন্যান্য দেশে গেছে।
দুর্নীতিবিষয়ক গ্রুপ গ্লোবাল উইটনেসের জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানী প্রচারক জোনাথান নোরোনহা-গান্ট বলেছেন, ‘ইইউ দেশগুলো বর্তমানে রাশিয়ার বেশিরভাগ গ্যাস কিনছে। এরমাধ্যমে ক্রেমলিনের আয়ের উৎসে বড় ভূমিকা রাখছে তারা।’
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপে পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস আসা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে রাশিয়ার তরল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ না হয়ে উল্টো বেড়েছে। অবশ্য রাশিয়ার এলএনজির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
গ্লোবাল উইটনেস জানিয়েছে, ইউরোপের দেশগুলো ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে ২২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস কিনেছে। ২০২১ সালে এই একই সময়ে এই গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার।
হামলার জবাবে রাশিয়ার তেল ও কয়লার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি ইইউ দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাসের মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নতুন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে রাশিয়ার তেল ও কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এলএনজি কেনায় সেসব নিষেধাজ্ঞায় কোনো লাভই হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গ্লোবাল উইটনেসের জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানী প্রচারক জোনাথান নোরোনহা-গান্ট। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার গ্যাস কেনা রাশিয়ার তেল ও কয়লা কেনার মতোই। দুটোই যুদ্ধে অর্থের যোগান দিচ্ছে। আর রাশিয়াকে দেওয়া প্রতিটি ইউরোর অর্থ হলো আরও রক্তপাত। ইউরোপের দেশগুলো যুদ্ধের নিন্দা করছে, কিন্তু একই সঙ্গে পুতিনের পকেটে অর্থ দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘রাশিয়ার এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিয়ে এসব দেশের কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখা উচিত। এসব এলএনজি যুদ্ধের অর্থের যোগান দিচ্ছে সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি করছে।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান