করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় তিনটি পৃথক অভিযোগে ১১ বছর করে কারাদণ্ড পাওয়া জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালত।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
এ মামলায় দণ্ড নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করেন আরিফুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে জামিন আবেদন করেন তিনি। ওই জামিন আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের পর আজ শুনানি নিয়ে জামিন স্থগিতের আদেশ দেন।
এর আগে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত বছর ২০২২ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ রায় দেন। রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
তিনটি ধারার সাজা পরপর কার্যকর হবে মর্মে রায়ে বলা হয়েছে। তাই তাদের ১১ বছর সাজাই খাটতে হবে বলে জানান মামলার আইনজীবীরা।
সাবরিনা-আরিফুল ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।
গত বছরের ১১ মে এ মামলার আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন। ওই দিন ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরী লিখিত বক্তব্য জমা দেন। এরপর মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
এ মামলায় ওই বছর ২৯ জুন উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। চার্জশিটভুক্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। মামলার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জেকেজির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে সাবরিনা আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়।
২০২০ সালের ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।
জানা গেছে, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।