বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

শুল্কবৃদ্ধির প্রতিবাদে ভারতে এশিয়ার বৃহত্তম পেঁয়াজের বাজার বন্ধ

আরব-বাংলা রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ১২:৫৩ pm

পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় ‘ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার’ নামে পরিচিত মহারাষ্ট্রে বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা। তাদের বিক্ষোভের কারণে গত ২ দিন ধরে বন্ধ এশিয়ায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসালগাঁওসহ প্রায় সব পাইকারি বাজার।

ভারতের কৃষক ও কৃষিপণ্যের পাইকারি বিক্রেতাদের সংগঠনগুলোর জোট এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটিজ-এর (এআইএমসি) ডাকে এই ধর্মঘটে যান মহারাষ্ট্রের কৃষক ও কৃষিপণ্য বিক্রেতারা।

টানা ২ দিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন পাইকারি বাজার বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ‘ঐতিহাসিক মূল্যে’ পেঁয়াজ কেনার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেন।

মন্ত্রী বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজ ২ হাজার ৪১০ রুপিতে (৩ হাজার ১৭৮ টাকা) কিনে নেবে সরকার। গত বছর এই দর ছিল ১ হাজার ২০০ রুপি (১ হাজার ৫৮২ টাকা)।

তবে কৃষকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন কি না— এখনও জানা যায়নি। ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআই ও এনডিটিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের অধিকাংশ পাইকারি বাজারে কেনা-বেচা বন্ধ দেখা গেছে।

কৃষকরা ক্ষুব্ধ যে কারণে

পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন, তারপরেই আছে ভারত। প্রতি বছর ২ কোটি ৪০ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয় দেশটিতে।

উৎপাদিত এই পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলা থেকে। এ কারণে পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটি ‘ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার’ নামেও পরিচিত।

এবং মহারাষ্ট্র ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার নামে পরিচিত। দেশটির মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি থেকে।

কৃষিজাত এই ফসলটির চাহিদাও ভারতে প্রচুর। সবজি এবং মসলা— উভয় হিসেবেই এটি অপরিহার্য দেশটির প্রায় সব রাজ্যে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর মোট উৎপাদনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে ভারত।

তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্যতীত অধিকাংশ ভারতীয় ডিশে পেঁয়াজ অপরিহার্য হলেও দেশটির পেঁয়াজের বাজার খুবই অস্থিতিশীল। কারণ, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই সবজি বা মসলাটি দ্রুত পচে যায় এবং হিমাগারে নিজেদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা দেশটির অধিকাংশ কৃষকের নেই।

ভারতে গ্রীষ্ম ও শীত— দুই মৌসুমেই চাষ হয় পেঁয়াজ। গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে যে ফসল ওঠে, তা দিয়ে দেশটির মোট পেঁয়াজের চাহিদার ৬৫ শতাংশ মেটে।

গত ১৯ আগস্ট শনিবার কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির শুল্ক ৪০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত এক সরকারি প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর থাকবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুচরা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে এটিও একটি।

তবে রোববার থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে অংশ নেওয়া কৃষকরা ভারতীয় বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লাভবান হবেন মূলত বড় কৃষক ও আড়ৎদাররা, অন্যদিকে ভয়াবহ লোকসান গুণতে হবে মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের।

কারণ, রপ্তানি শুল্ক আরোপের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় সবই বিক্রি হবে অভ্যন্তরীণ বাজারে। বড় কৃষক ও আড়ৎদাররা হিমাগারে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলেও মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের অধিকাংশই সেই সুযোগ পান না।

এক কৃষক বলেন, ‘গত বছরও এই পরিস্থিতি হয়েছিল। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ রুপিতে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল; কিন্তু সেই সুবিধা ভোগ করেছিল বড় কৃষকরা। অনেক ছোট কৃষককে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৮ থেকে ২০ রুপিতে বিক্রি করতে হয়েছে।’

‘এখন রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোয় স্বাভাবিকভাবেই পেঁয়াজ রপ্তানি কমে যাবে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামও পড়ে যাবে। আমাদের অনেকের মুনাফা তো দূর, চাষের খরচও হয়তো উঠবে না,’ পিটিআইকে বলেন ওই কৃষক।

সরকারের প্রতিশ্রুতি

মঙ্গলবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল বলেন, ‘একটি চক্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে গুজব ছড়াচ্ছে। কৃষকদের প্রতি অনুরোধ— দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। চলতি মৌসুমে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ ২ হাজার ৪১০ রুপিতে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

‘এই মূল্য ঐতিহাসিক। কারণ এর আগে এতদামে কৃষকদের কাছ থেকে কখনও পেঁয়াজ কেনা হয়নি। তাই কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের অন্তর্ভুক্ত দুই সংস্থা ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজ্যুমার্স ফেডারেশন (এনসিসিএফ) এবং ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (নাফেদ)-এর মাধ্যমে এই ক্রয়প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের কৃষিমন্ত্রী ধনঞ্জয় মুণ্ডে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারগুলো বন্ধ থাকার সংবাদ পেয়ে রাজ্যের ২ উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার ও দেবেন্দ্র ফড়নবীশ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারপরই মঙ্গলবার দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলনে ডাকেন পীযুষ গয়াল।

শেয়ার করুন

আরো
© All rights reserved © arabbanglatv

Developer Design Host BD