বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের মাঝে ধনী-গরিব সৃষ্টি করেছেন। ধনী মানুষেরা পৃথিবীতে কিছুটা প্রাচুর্যে বসবাস করেন গরিবদের তুলনায়। তবে পরকালের গরিবদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। তারা ধনীদের তুলনায় প্রায় ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দরিদ্র মুমিনরা ধনীদের চেয়ে অর্ধদিন আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আখিরাতের অর্ধদিনের পরিমাণ হলো পৃথিবীর ৫০০ বছর।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১২২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিয়ো এবং কিয়ামত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর কোরো। (এ কথা শুনে) আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন এরূপ বলছেন? তিনি বলেন, হে আয়েশা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হে আয়েশা! তুমি দরিদ্র ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিয়ো না। যদি দেওয়ার মতো কিছু তোমার কাছে না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরো হলেও তাকে দিয়ো। হে আয়েশা! তুমি দরিদ্রদের ভালোবাসবে এবং তাদের তোমার সান্নিধ্যে রাখবে। তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তোমাকে তাঁর সান্নিধ্যে রাখবেন।
(তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫২)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্র লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মতো সালাত আদায় করছেন, আমাদের মতো সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ কথা শুনে তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে? তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪৩, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯৫)
সহিহ মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, কিছু সাহাবি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ধনীরাই তো বেশি নেকির অধিকারী হয়ে গেল।
তারা নামাজ পড়ছে, যেমন আমরা নামাজ পড়ছি, তারা রোজা রাখছে, যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজই করছে যে) নিজেদের প্রয়োজন অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সদকা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সদকা করার মতো জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবিহ সদকা, প্রত্যেক তাকবির সদকা, প্রত্যেক তাহলিল তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সদকা, ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া সদকা ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সদকা এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সদকা।’ সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বলেন, ‘তোমরা কী বলো, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০০৬)