অভ্যাসগত কারণেই সকালে ঘুমটা ভাঙলো। আড়মোড়া ভেঙে সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে বের হয়ে বধ্যভূমির দিকে কিছুটা যেতেই মন শীতল করা ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলো। সেই সঙ্গে দেখা মিললো ধান ক্ষেতের ওপর মেঘের মতো কুয়াশা। আনন্দে নেচে উঠলো মন। এই তো শীত চলে এসেছে।
অন্য পাঁচটি ঋতুর চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকাল ধরা দেয় আলাদাভাবে। রুক্ষতা, তিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে আসে শীত। প্রকৃতি হয় বিবর্ণ, বিরাজ করে রুক্ষতা। অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরে পড়তে থাকে। কুয়াশাচ্ছন্ন সমগ্র প্রকৃতি, শিশিরসিক্ত রাস্তাঘাট কিংবা হিমেল বাতাস মতিহারের এই সবুজ গালিচায় নিয়ে আসে ভিন্ন রূপ।
রাজশাহীর তীব্র গরমের পর শীতের আগমনী বার্তায় যেন এক নতুন আমেজ তৈরি হয়। ধান গাছের পাতার ডগায় জমে থাকা মুক্তার মতো ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু যেন বলছে- এই তো এসে গেছি, আর তপ্ত দুপুরের ভেপসা গরমের ঝলসানি নয়। এবার হবে উৎসব।
শীতকালে রাবি ক্যাম্পাস সবচেয়ে বেশি অপরূপ লাগে। শীত আসলেই শুরু হয় হরেক রকম পিঠার বাহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসির সামনে সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলে পিঠা উৎসব। কুয়াশা ভেজা ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় রাবির প্যারিস রোড, পশ্চিমপাড়া, বধ্যভূমি, পুরাতন ফোকলোর চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর।
সন্ধ্যা হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গা, বিভিন্ন চত্বরসহ হলগুলোতে শুরু হয় ব্যাডমিন্টন খেলা। এ খেলার মাধ্যমেই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন প্রতিটি রাতকে শিক্ষার্থীরা উপভোগ্য করে তোলে। অন্ধকারে শেয়ালের হাঁক-ডাকে যে সরব হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
ভোরে কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে বের হয় কুয়াশার আবরণ গায়ে মাখতে। এ সময় সামনের কোনো কিছুই দেখা যায় না। সবকিছু যেনো অস্পষ্ট মনে হয়। কখনো কখনো কুয়াশার স্তর এত ঘন থাকে যে, দেখলে মনে হয় সামনে কুয়াশার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘের মতো ভাসমান কুয়াশার সঙ্গে থাকে হিম শীতল বাতাস। সকালে যবুথবু হয়ে ক্লাসে আসে শিক্ষার্থীরা। একটু উষ্ণতার জন্য গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে বিভিন্ন দোকানে ভীড় করে শিক্ষার্থীরা। পৌষ ও মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও এবার হেমন্তের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের আগম বার্তা নিয়ে এসেছে মোহনীয় কুয়াশা।