চলতি সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক জোট জি ২০ সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিফিংয়ে মাও নিং বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাভিত্তিক যত জোট আছে, সেসবের মধ্যে জি২০ প্রধান। চীন সবসময়ই এই ফোরামের যে কোনো কর্মসূচী ও পদক্ষেপকে বরাবরই খুব গুরত্ব দেয় এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয় এবারের সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।’
আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে হবে জি ২০ সম্মেলন। এই সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যে উপস্থিত থাকতে পারবেন না তা ইতোমধ্যে প্রকাশিত। শি জিনপিংয়ের বদলি হিসেবে লি কিয়াং যাচ্ছেন কিনা— সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করেছিলেন। তবে এই প্রশ্নের উত্তর এড়েয়ে গেছেন মাও।
চীনের অতীত রেকর্ড বলছে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কখনও এক সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনোইভেন্টে অংশ নেন না। হয় প্রেসিডেন্ট, নয়তো প্রধানমন্ত্রী এসব ইভেন্টে চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকেন। তবে দেশটির সরকারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতিশাসিত ধাঁচের হওয়ায় যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চীনের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণত প্রেসিডেন্টই থাকেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে চীনের উপরাষ্ট্রপতি হন শি জিনপিং, তারপর ২০১২ সালে হন রাষ্ট্রপতি। উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হওয়া প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে হয় শারীরিকভাবে, নয়তো ভার্চুয়ালি চীনের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন শি জিনপিং। আন্তর্জাতিক কোনো ইভেন্ট থেকে চীনের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে শি জিনপিং নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন— এমনটা এই প্রথম ঘটল।
এদিকে কিছুদিন আগে শি জিনপিংয়ের ঘণিষ্ট মিত্র এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জি ২০ সম্মেলনে যাওয়ার ব্যাপারে অপরাগতা জানিয়ে বলেছেন, তার পরিবর্তে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ উপস্থিত থাকবেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, পুতিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জিনপিং।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওয়েন তি সুং বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘পুতিন ও জিনপিং কেউই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না। এ উভয়েই বিশ্বাস করেন যে পূর্ব জেগে উঠছে এবং পশ্চিমের পতন ঘটছে। কিছুদিন আগে ব্রিকস সম্মেলনে তিনি চীনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাই এবার বন্ধু পুতিনির প্রতি সংহতি জানিয়ে এই সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকতেই পারেন।’
এদিকে শি জিনপিং সম্মেলনে না আসায় হতাশা প্রকাশ করে রোববার জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি হতাশ, তবে তার সঙ্গে আমার দেখা হবে।’
বাইডেনের এই আশাবাদের ভিত্তি রয়েছে। আগামী নভেম্বরে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো অপারেশনের (অ্যাপেক) বৈঠকে বাইডেন এবং জিনপিং— উভয়েরই উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স