সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

ছেলের সামনে থেকে ভারতীয় সেনাকে অপহরণের পর হত্যা

আরব-বাংলা রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৫:৪৩ am

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ভারতীয় এক সেনাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। নিহত ওই সেনার নাম সিপাহী সার্তো থাংথাং কোম। তিনি ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন এবং সেখান থেকে অপহরণের পর তাকে হত্যা করা হয়।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের একটি গ্রামে বাড়ি থেকে অপহরণের পর এক সেনা জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। ছুটিতে থাকা সিপাহী সার্তো থাংথাং কোমকে গত শনিবার ইম্ফল ওয়েস্ট জেলায় তার বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। পরে রোববার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এনডিটিভি বলছে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীরা সিপাহী সার্তো থাংথাং কোমকে অপহরণ করে। এই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তার ১০ বছর বয়সী ছেলের মতে, তার বাবা এবং সে বারান্দায় কাজ করার সময় তিনজন লোক তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে।

পরে তারা সিপাহী কোমের মাথায় পিস্তল ধরে তাকে একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে তার ছেলে পুলিশকে জানায়।

রোববার ইম্ফল ইস্টের মংজামের পূর্বে খুনিংথেক গ্রামে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিহত এই সৈনিকের মাথায় বুলেটের ক্ষত ছিল। সিপাহী কোম তার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে রেখে গেছেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা সিপাহী সার্তো থাংথাং কোমের হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই কঠিন সময়ে তার পরিবারের পাশে আছি।’

বিবৃতি অনুযায়ী, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী নিহতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া সম্ভাব্য সব উপায়ে নিহতের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে ছুটে গেছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাঝে উত্তেজনা চলছে। গত মে মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কুকি উপজাতিরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ঘিরে ওই দিন পার্বত্য এই রাজ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এরপর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা ওই সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। রাজ্যটিতে কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়া রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলনও হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের।

তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।

সম্প্রতি ভারতের হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।

এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই মণিপুরে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে বিরোধ চলছে। সাড়ে চার মাস ধরে রাজ্যটির পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। প্রায় ১৫০ মানুষ সেখানে মারা গেছেন। মেইতেই এলাকায় কুকিদের এবং কুকি এলাকায় মেইতেইদের যে বাড়ি ছিল প্রায় সব জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুই পক্ষের হাতেই প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। প্রায়ই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনাও ঘটছে। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আসাম রাইফেলস ব্যারিকেড করে রেখেছে। তাছাড়া কুকি মেয়েরাও দিনরাত রাস্তায় বসে থেকে প্রহরা দেন।

আবার মেইতেই এলাকায় একই কাজ করেন মেইতেই নারীরা। সেখানেও মণিপুর পুলিশের ব্যারিকেড আছে। তারপরও প্রায়ই ঘটছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।

শেয়ার করুন

আরো
© All rights reserved © arabbanglatv

Developer Design Host BD