বিশ্বব্যাপী দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে চীনে। সেখানে দাম বাড়ার বদলে দাম কমছে। আর দাম কমার বিষয়টিও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
গত জুলাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন গত দুই বছরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্ফীতহ্রাসে’ প্রবেশ করে। দেশটিতে এই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা পর্যায়ে দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০২৩ সালের প্রায় পুরোটা সময় দাম একই অবস্থায় ছিল। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও চীনে হয়েছে উল্টোটা।
দাম কমার বিষয়টি ভোক্তাদের কাছে আনন্দের বিষয় হলেও— অর্থনীতিবিদরা স্ফীতহ্রাস বা পণ্যদ্রব্যের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টিকে অর্থনীতির জন্য খারাপ ইঙ্গিত হিসেবে দেখেন।
যখন দীর্ঘ সময় ধরে দাম কমে যায়, ভোক্তারা খরচ কমিয়ে দেন এবং উৎপাদনকারী কোম্পানি তাদের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এরমাধ্যমে এসব কোম্পানিতে ছাঁটাই এবং কম বেতনে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়টি চলে আসে।
এ মুহূর্তে স্ফীতহ্রাস দেখা যাওয়ায় করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে চীনের অর্থনীতির শক্তি নিয়ে এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা কেন চীনে নিত্যপণ্যের দাম কমে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত?
চীন এর আগেও স্ফীতহ্রাস সমস্যায় পড়েছিল। কিন্ত অর্থনীতিবিদরা এবার একটু বেশি চিন্তিত। সর্বশেষ চীনে নিত্যপণ্যের দাম কমতে দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালে। সে বছর করোনা মহামারির কারণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দেশটি। এতে করে বেশিরভাগ কোম্পানির চাহিদা কমে গিয়েছিল। অনেক কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিল।
গত বছর এসব কঠোর বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর এখন চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটি দেখা যাচ্ছে না।
করোনাকালীন সময় থেকে যদিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারী ব্যাংক ২০২৩ সালের বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, চীন যে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সেটিও বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ ছাড়া অর্জিত হবে না।
কঠোর লকডাউনের ভয়াবহতার কারণে চীনের বেশিরভাগ ভোক্তা এখনো অর্থ খরচে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে বড় উন্নতি সাধনে বঞ্চিত হচ্ছে অর্থনীতি।
অপরদিকে বিদেশি ভোক্তারা— অনিশ্চিত বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে চীনের কোম্পানিগুলো থেকে কম পণ্য কিনছে।
চীনে এমন সময় এ তীক্ত বিষয়টি সামনে এলো— যখন দেশটির অর্থনীতি কম জন্মহার, আঞ্চলিক সরকারের অতিরিক্ত ঋণ, ঝিমানো আবাসন খাত এবং তরুণ বেকারদের কারণে তীব্র সংকটে পড়তে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা