দিন কয়েক আগেও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল। এরপর সেই খবরটি নিজেই ভুয়া বলে জানান স্ট্রিক। তবে এবার সত্যিই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এই পেস বোলিং কোচ। তার স্ত্রী নাদিনে স্ট্রিক এক ফেসবুক পোস্টে সেই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অনেকদিন ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন ৪৯ বছর বয়সী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। চলতি বছরের মে মাসে খবর বেরিয়েছিল, লিভার এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি। ডাক্তারের পক্ষ থেকে জানা যায় হিথ স্ট্রিকের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এরপর থেকে তিনি ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
ফেসবুক পোস্টে তার স্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সালে ৩ সেপ্টেম্বর (আজ) ভোরে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভালবাসা এবং আমার সুন্দর সন্তানদের বাবাকে ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে তিনি নিজ পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে শেষ দিনগুলো কাটাতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রেম এবং শান্তিতে আচ্ছাদিত ছিলেন এবং একা পার্কে হাঁটেননি। আমাদের আত্মা অনন্তকালের জন্য আবদ্ধ, স্ট্রিকি। যতক্ষণ না আমি আবারও তোমাকে আঁকড়ে ধরি।’
জিম্বাবুয়ের সাবেক এই পেস বোলার বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও কাজ করেছেন লম্বা সময় ধরে। আফ্রিকান দেশটির সর্বকালের সেরা বোলার তিনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ১০০ উইকেট শিকার করা প্রথম বোলার তিনি। দেশটির হয়ে টেস্টে ২০০ উইকেট শিকার করা একমাত্র বোলার স্ট্রিক। এমনকি তাদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে তার নাম।
স্ট্রিক জিম্বাবুয়ের হয়ে ৬৫টি টেস্ট এবং ১৮৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। বল হাতে খ্যাতি পেলেও একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই তাকে মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। জিম্বাবুয়ের জার্সিতে সর্বোচ্চ উইকেট দখলের কীর্তিও তারই। ৪৫৩ উইকেট নিয়ে সবার ওপরেই আছেন তিনি। সেইসঙ্গে ব্যাট হাতে করেছেন ৪ হাজার ৯৩৩ রান।
২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন দলের অধিনায়ক ছিলেন স্ট্রিক। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলেঙ্গাদের নিয়ে জিম্বাবুয়েকে বিশ্ব ক্রিকেটের নামি মুখ করে তোলার পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন এই পেসার।
টেস্টে ২২.৩৫ গড়ে হিথ স্ট্রিকের সংগ্রহ ১৯৯০ রান। এই ফরম্যাটে ২৮.১৪ গড়ে ২১৬ উইকেট নিয়েছেন। সাদা বলের ক্রিকেটে তার রান ২৯৪৩ রান, সেইসঙ্গে আছে ২৩৯টি উইকেট।
২০০৫ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর যুক্ত হয়েছিলেন কোচিং পেশার সঙ্গে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। হালের মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে আসার কারিগরও তিনি। এছাড়া দুই দফায় (২০০৯-১৩ এবং ২০১৬-১৮) ছিলেন জিম্বাবুয়ের কোচ। ২০১৮ সালে ছিলেন আইপিএল এর দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে।
যদিও কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডারের শেষটা সুখকর ছিল না। একাধিক লিগে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। হিথ স্ট্রিক নিষেধাজ্ঞা মেনে নিলেও নিজের ওপর আসা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন বারবার।
এর আগে ২৩ আগস্ট একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যু হয় তার। শেষ সময়ে তার পাশে ছিল পরিবার এবং কাছের বন্ধুরা। শুরুতে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবরে সারাবিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরে চার ঘণ্টার ব্যবধানেই শোনা যায় ভিন্ন এক খবর। তখন বলা হয়, বেঁচে আছেন জিম্বাবুয়ের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। টুইটারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সাবেক সতীর্থ হেনরি ওলোঙ্গা। শুরুতে এই পেসারই জানিয়েছিলেন স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর!