শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৯ অপরাহ্ন

এক মাস ধরে অসুস্থ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট, দায়ী বায়ুদূষণ?

আরব-বাংলা রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ৬:৪৯ am

গত এক মাস ধরে অসুস্থ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো; কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। দেশটির পর্যটন ও সৃষ্টিশীল অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী সানদিয়াগা উনো কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য।

শুক্রবার রাজধানী জাকার্তায় মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে আলজাজিরাকে উনো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গত প্রায় চার সপ্তাহ ধরে কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেছেন, এর আগে কখনও এমন অসুস্থতা তিনি বোধ করেননি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জাকার্তার বায়ুদূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।’

উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ বায়ুদূষণ পরিস্থিতি চলছে জাকার্তায়। আন্তর্জাতিক বায়ুমান সূচক আইকিউ চলতি মাসে জাকার্তাকে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আমাদের চারপাশের বাতাসে বিভিন্ন গ্যাস ও ধূলিকণার পাশাপাশি ভেসে বেড়ায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা যা শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা সম্ভব নয়। পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত এসব বস্তুকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের ভেতর ঢুকে আটকে থাকে এবং গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বায়ুর গুণাগুণ বিষয়ক নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো এলাকার বাতাসের পিএম ২ দশমিক ৫ উপাদানের পরিমাণ যদি শূন্য থেকে ৫০ থাকে, সেক্ষেত্রে সেখানকার বাতাস ‘ভালো’; সূচক যদি ৫১ থেকে ১০০’র মধ্যে থাকে, তাহলে বাতাসের মান সন্তোষজনক।

কোনো এলাকার বাতাসের পিএম ২ দশমিক ৫-এর পরিমাণ যদি ১০১ থেকে ২০০ থাকে তাহলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং ২০০’র বেশি থাকলে তাকে ‘ভয়াবহ’বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায়।

আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, জাকার্তার এখনকার বায়ুমান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। যদি আর একধাপ অবনমন ঘটে, সেক্ষেত্রে ‘ভয়াবহ’ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে ৭০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই রাজধানী শহরটির বায়ুদূষণ পরিস্থিতি।

এর আগেও অবশ্য জাকার্তা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ছিল। যানবাহন থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া, ভবন নির্মাণ প্রকল্প, শহরের চারপাশ ঘিরে থাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প কারখানাগুলো থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া এই দূষণের অন্যতম কারণ।

এদিকে জোকো উইদাদোর সমালোচকরা বলছেন, তার অসুস্থতার কারণ যদি বায়ুদূষণ হয়, সেক্ষেত্রে আজকের এই অবস্থার জন্য তিনি নিজেই দায়ী।

২০২০ সালে জাকার্তার বায়ুদূষণ পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে নিম্ন আদালতে মামলা করেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার কয়েকজন নাগরিক। ‘সিটিজেন ল’স্যুট’ নামের সেই মামলায় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদোসহ তার মন্ত্রিসভার ৩ জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছিল।

২০২১ সালে সেই মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক বলেন, ‘আসামিরা বলেছেন, তারা পশ্চিম জাভা ও বানতেনের (জাকার্তার সংলগ্ন দুই প্রদেশ) গভর্নরদের তাদের প্রদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে গভর্নরা তাতে চুড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’

‘আসামিরা জাকার্তার বায়ু দূষণ পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে অবহেলা প্রদর্শন করেছেন এবং এটি একটি অপরাধ,’ রায়ে বলেন আদালত।

নিম্ন আদালত রায় ঘোষণার পর তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন উইদাদো এবং অন্যান্য আসামিরা। ২০২২ সালে নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রেখে সেই মামলার রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন আসামিরা। এখনও সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোনো মিমাংসা আসেনি।

মামলার বাদিপক্ষের অন্যতম সদস্য এলিসা সুতানুদজাজা আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারা (আসামিপক্ষ) গত দু’বছর যাবত আদালতে বার বার বলেছেন যে জাকার্তায় কোনো বায়ুদূষণের জন্য তারা দায়ী নন এবং প্রতিবারই আদালত তাদের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। দূষণ রোধে কোনো পদক্ষেপ তারা এ পর্যন্ত নেননি।

‘এখন প্রেসিডেন্ট অসুস্থ হওয়ার পর সরকারের মধ্যে ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে— এটা কি খুব দুঃখজনক নয়? কেবল দূষিত বায়ুর কারণে গত দুই বছরে জাকার্তায় কত সংখ্যক মানুষ অসুস্থতা-মৃত্যুর শিকার হয়েছেন, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা আছে?’

ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, চলতি আগস্টে জাকার্তায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৬ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলন সংস্থা গ্রীনপিসের ইন্দোনেশীয় শাখা গ্রিনপিস ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী সদস্য বোনদান আন্দ্রেইয়ানু আলজাজিরাকে বলেন, ‘সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব জাকার্তায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং দ্রুত এই সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া।’

শেয়ার করুন

আরো
© All rights reserved © arabbanglatv

Developer Design Host BD