স্বৈরাচারী শাসনে পৃথিবীর বিচ্ছিন্নতম দেশ উত্তর কোরিয়া। সর্বোচ্চ নেতা কিম জন উনের (৩৯) আদেশ ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না দেশটিতে। আইন, শাসন, নাগরিক সবই চলে তার মর্জিতে।
২ কোটি ৬১ লাখ মানুষের দেশটিতে ‘বাকস্বাধীনতা’ বলে কিছু নেই। ঘরে-বাইরে, হাতে-পায়ে-মুখে সবখানেই কড়া ‘নিয়মতন্ত্র’র শেকল। চুন থেকে পান খসলেই ভয়াবহ শাস্তি। অদ্ভুত সব বিধিব্যবস্থার জালে আটকে রাখা হয় বাসিন্দাদের।
সরকার যন্ত্রের চলমান সে ট্রেনে এবার বুলেট গতি আনল পিয়ংইয়ং-ফোন কল রেকর্ড। দেশ শাসনের মেন্যুতে নতুন এ ‘ব্যঞ্জনে’ রীতিমতো ঘরে ঘরে আড়ি পাতছেন কিম। কে কখন কার সঙ্গে কী কথা বলছে-চাইলে সব চলে যাবে কিমের কানে। ইয়নহ্যাপ নিউজ।
মাসদুয়েক হলো শাসন প্রণালিতে নতুন এ শাখা খুলেছে উত্তর কোরিয়া। আইন লঙ্ঘনকারী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ‘ওয়ারট্যাপিং’র মাধ্যমে নজর রাখা হচ্ছে। জুলাই মাসে মাঝামাঝি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্টদের দ্বারা এভাবে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্রের মতে, উত্তর কোরিয়ার একজন দলত্যাগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিল। সেই ফোন কলের দুদিন পর নিরাপত্তা এজেন্টরা তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তার চাইনিজ ফোনটি জব্দ করে নিয়ে যায়।
উচ্চ স্তরের এ নজরদারি আরও দুটি উপায়ে করা হয়ে থাকে। প্রথম ব্যবস্থাটির নাম ‘ইনমিনবান’। এটিকে উত্তর কোরিয়ার ‘নেইবারহুড ওয়াচ’ নামক সমবায় সংস্থা নামে পরিচিত। প্রত্যেক নাগরিকই এ সংস্থার সদস্য। যেকোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা রাজনৈতিক অবাধ্যতার জন্য ‘ইনমিনবান’র সদস্যরা একে অপরকে পর্যবেক্ষণ করতে বাধ্য। তাদের মধ্যে একজন নেতাকে নিয়মিত দলীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে হয়।
কেউ অসদাচরণ বা আইন লঙ্ঘন করলে তা রিপোর্ট করা হয়। দ্বিতীয় ব্যবস্থায় সাংগঠনিকভাবে নাগরিকদের কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারি চালানো হয়। এ ব্যবস্থায় দেশে বিদ্যমান পাঁচটি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার মধ্যে নাগরিকদের শুধু একটির সদস্য হতে হবে। ‘একক’ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হলো ‘ওয়ার্কার্স পার্টি’।
এই পার্টিকে আবার চারটি সহায়ক সংস্থা দ্বারা বিভক্ত করা হয়। সংস্থাগুলোকে পার্টির ‘ড্রাইভিং বেল্ট’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে-যুব ইউনিয়ন, বাণিজ্য ইউনিয়ন, কৃষক ইউনিয়ন এবং নারী ইউনিয়ন।
শাখাগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও কৃষক ইউনিয়নের নারী ও পুরুষ সদস্যরা ত্রিশোর্ধ্ব হয়ে থাকেন। নারী ইউনিয়নে দলীয় সদস্য না হলে বিবাহিত ও কর্মজীবী নারীরা সদস্য হয়ে থাকেন। যুব ইউনিউয়নে ১৪-৩০ বছরের মধ্যে নাগরিকরা সদস্য হয়ে থাকেন।
সাংগঠনিক জীবন ১৪ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে যায়। এটি বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন। ১৮ বছর বয়সেই তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগদানের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেন।
প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সম্মিলিত খামার (রাষ্ট্র পরিচালিত), স্কুল, সরকারি সংস্থা এবং সামরিক ইউনিট যেকোনো একটি পার্টির সদস্য হবে। প্রতিটি সংস্থাই সাধারণত এক বা দুই ডজন সদস্য নিয়ে গঠিত। সপ্তাহে দুই বা কখনো কখনো তিনবার মতসভার আয়োজন করা হয়।
নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে একবার সংস্থাগুলো নিজেদের এবং অন্য সংস্থাগুলোর বিষয়ে আলোচন-সমালোচনা করে। সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যকে প্রকাশ্যে মতবিনিময় করতে হবে। আগের সপ্তাহে সংঘটিত যেকোনো অন্যায়ের জন্য নিজ অবস্থান থেকে অনুতপ্ত হতে হবে।