জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিসহ ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত নাম ‘জল্লাদ’ শাহজাহান। দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর গত ১৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
দীর্ঘ ৩২ বছর পর এবারই প্রথম ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে যাচ্ছেন শাহজাহান। কারাগার থেকে বেরিয়ে কয়েকদিন ধরে দেখা করেছেন তার সঙ্গে কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। কারামুক্তির পর কীভাবে দিনযাপন করছে, ঈদের নামাজ কোথায় আদায় করবেন- এসব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন শাহজাহান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।
জাগো নিউজ: এত বছর পর মুক্তি পেয়ে কীভাবে দিন পার করছেন?
শাহজাহান: ৩২ বছর কারাগারে থাকার ফলে অসংখ্য ভালো আসামির সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তারা অনেক সময় আমাকে টাকা অথবা সিগারেট কিনে দিয়েছেন। বন্দি জীবনে এক প্যাকেট সিগারেটের মূল্য এক কোটি টাকার সমান। সেই মানুষগুলোকে খুঁজে বের করে দেখা করছি। কারাগার থেকে বেরিয়ে এই কয়েকটি দিন তাদের সঙ্গে দেখা করে, গল্প করে সময় কেটে যাচ্ছে।
জাগো নিউজ: ৩২ বছর কারামুক্ত হয়েছেন। এবার ঈদের নামাজ কোথায় আদায় করবেন?
শাহজাহান: ৩২ বছর পর কারাগারের বাইরে ঈদের নামাজ আদায় করবো। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আদায়ের ইচ্ছা আছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
জাগো নিউজ: সম্পত্তি নিয়ে বোনদের সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয়েছে?
শাহজাহান: আমার তিন বোন। দুই বোন মারা গেছে। বেঁচে আছেন শুধু বড় বোন। আমি দীর্ঘ ৩২ বছর জেলে কাটিয়েছি। এই সময়ে আমার বোনেরা জমাজমি দেখে রেখেছে। জমাজমির কোনো সমস্যা হলে বোন এবং ভাগনে-ভাগনিরা কষ্ট পেতো। জায়গা-জমির প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। যতদিন বাঁচি আল্লাহর রহমতে বাঁচতে চাই।
জাগো নিউজ: এর মধ্যে নরসিংদী গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন?
শাহজাহান: একবার গিয়েছিলাম। তখন আমার বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া এলাকার অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছে।
জাগো নিউজ: এই বয়সে এসে আপনার ইচ্ছা কী?
আরও পড়ুন>> এরশাদ শিকদার-বাংলা ভাইসহ ২৬ জনের ফাঁসি দেন জল্লাদ শাহজাহান
শাহজাহান: হজে যাওয়ার নিয়ত করেছি। যদি আল্লাহ সুযোগ দেন তাহলে একবার অন্তত কাবা শরিফ নিজ চোখে দেখে দোয়া করে আসবো। এরপর আল্লাহ মৃত্যু দিলে কোনো আপত্তি নেই।
জাগো নিউজ: ভাগনে-ভাগনিরা খোঁজ-খবর নেয় কি না?
শাহজাহান: আগে সেভাবে খোঁজ-খবর নেয়নি। তবে জেল থেকে বের হওয়ার পরে তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
জাগো নিউজ: কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথায় বসবাস করছেন?
শাহজাহান: আমার সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে ঢাকায় একজনের বাসায় রয়েছি। তিন খুব আদর-যত্ন করেন। যা খেতে চাই তা পূরণ করেন। থাকা-খাওয়াতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি যে কদিন বাঁচি এখানেই থেকে যেতে বলেছেন তিনি। তবে আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
জাগো নিউজ: এখন পর্যন্ত কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেছে কি না?
শাহজাহান: সরকারিভাবে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে এখন পর্যন্ত কেউ সাহায্য করেনি। তবে মশিউর রহমান নামে একজন সাংবাদিক আছেন, তিনি সব সময় আমার খোঁজ-খবর রাখছেন। রক্তের ভাইয়ের মতো তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছেন আমাকে।
জাগো নিউজ: সরকারের কাছে কোনো চাওয়া আছে কি না?
শাহজাহান: ঈদের পরে আমি সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জাবাবো।
জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শাহজাহান: আপনাকে, জাগো নিউজ পরিবারকে ধন্যবাদ। দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।