২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। দেশের ৭০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং ২৮টি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ফোরামটি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রতিবেদনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে, এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৫৯০ জন। এদের মধ্যে ৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু।
তিনি বলেন, এই সময়ে গৃহের অভ্যন্তরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ জন কন্যাশিশু। পাচার এবং কিডন্যাপের শিকার হয়েছেন ৩২ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশু। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ২২ জন। এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু। এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরো ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে। ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী এবং ৩৪ জন কন্যাশিশু। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন, যার মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু।
একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য তুলে ধরে নাছিমা আক্তার জলি বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের থানায় বিগত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি। অন্যদিকে ডিএমপির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে রাজধানী ঢাকায় ৩ হাজার ৪২টি ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ২ হাজার ৪৭০ জন এবং শিশু ৫৭২ জন। তাদের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে শুধু ঢাকা মহানগরীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা মাত্র ২৪ জন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সহিংসতা, যৌন হয়রানির ঘটনার এই ভয়াবহ বাস্তবতার পেছনে যথাযথ বিচার না হওয়ার বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখে। আমরা আরও মনে করি, যৌন হয়রানির ঘটনার বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক। এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ আইন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিশুদের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানাই।
একইসঙ্গে পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি রাখার আহ্বান
জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড রাইটস স্পেশালাইজড অ্যান্ড অ্যাকটিভিস্ট টনি মাইকেল গোমেজ, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি ও নারীমৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সম্পাদক ও অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ফারজানা খান, গুডনেইবারস বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ।