আলোচিত ব্যবসায়ী আমিন হেলালি। যিনি দশদিশা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ব্যবসায়িক অঙ্গনে তিনি বেশ কিছু কারণে খুবই আলোচিত-সমালোচিত। তার মধ্যে বলপ্রয়োগ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ দখল, এফবিসিসিআই নির্বাচনের আগে ভুয়া ভোটার করার অপচেষ্টা অন্যতম। তবে আমিন হেলালি বেশি পরিচিত আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ক্যাশিয়ার হিসেবে। হাছান মাহমুদ অবৈধভাবে যত সম্পদ গড়ে তুলেছেন তা গচ্ছিত রয়েছে এই আমিন হেলালির কাছে। এখানেই শেষ নয়, হাছান মাহমুদের যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা তিনি নিজের নামে না করে সব কিছুই করেছেন আমিন হেলালির নামে।
কিন্তু কেন হাছান মাহমুদ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজের নামে না করে আমিন হেলালির নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, আমিন হেলাল জন্ম, বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া সবই হয় চট্টগ্রামে, আর হাছান মাহমুদের বাড়িও চট্টগ্রামে। এবং তারা একই বয়সের এবং লেখাপড়াও করেছেন এই সঙ্গে। হেলালি ও হাছান দু’জন ক্লাশমেট। বাল্যকাল থেকে শিক্ষাজীবন একসঙ্গে শেষ করা এই জুটি কর্মক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্ন হয়নি, বরং গড়ে ওঠে দৃঢ় বন্ধুত্ব। একজন অপরজনের খুবই আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে হাছান মাহমুদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাতিয়ে নেওয়া শত শত কোটি টাকা গচ্ছিত রাখন বন্ধু আমিন হেলালির কাছে। এছাড়া হেলালি হাছান মাহমুদের দেওয়া টাকা দিয়ে ব্যবসা বিভিন্ন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েন, যাতে সম্পদের তথ্য বিররণীতে হাছান মাহমুদকে এতো বিশাল সম্পাদের তথ্য দিতে না হয়।
এখানেই শেষ নয়, তৎকালীন মন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির শীর্ষস্থানীয় পদ দখল করে নিয়েছেন। এফবিসিসিআইতে শক্তিপ্রয়োগ করে অসংখ্য ভুয়া ভোটার বানিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ এক বছর আগে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় হাছান মাহমুদের প্রভাব খাটিয়ে অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিকে প্রতিদ্বন্দ্বি করতে দেননি। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তিনি অন্য কাউকে ফরম তুলতেই দেননি, ফলে এ পদে নির্বাচন ছাড়াই তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখলে নিয়েছেন।
এদিকে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। রোববার (১১ আগস্ট ২০২৪) বিএফআইইউ’র সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে হাসান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরান ফাতেমা ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ধরনের টাকা তোলা বন্ধ রাখতে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করলে এতে তাদের কিছু যাবে আসবে না, কারণ, তাদের সম্পদের ভান্ডার হচ্ছে আমিন হেলালি, তিনিই হাছান মাহমুদের সব সম্পদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা শোনা করছেন।
ক্ষমতা হারানোর পর হাছান মাহমুদ পালিয়ে দেশ ত্যাগ করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিয়ে তাকে আটক করে। কিন্তু তার সম্পদের ভান্ডার যার কাছে গচ্ছিত রয়েছে সেই আমিন হেলালি রয়েছেন এখনো বহাল তবিয়তে।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ব্যবসায়ী আমিন হেলালির মোবাইল ফোন নম্বরে কল দেওয়া হয়েছে। তিনি কল রিসিভ না করার তার বক্তব্য জানা যায়নি।