ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের তারকা ফুটবলার জেনিফার হারমোসোকে ঠোঁটে চুমু দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। এরপর তার সমালোচনা করে ফেডারেশন থেকে পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন দেশটির অনেকে।
পরে অবশ্য এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন রুবিয়ালেস। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘চুমুটা ছিল স্নেহপূর্ণ। এটাকে নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, তারা মূর্খ।’ তবে ক্রমেই তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্ছার হন সাবেক ও বর্তমানের ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তাতেও পার পাননি তিনি, তার পদত্যাগের দাবি তুলে স্পেনের নারী ফুটবল লিগ ‘লিগা এফ’।
এ নিয়ে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) জরুরি বৈঠকে বসেছিল স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। তখন অনেকে ধারণা করছিলেন, চাপের মুখে হয়ত পদত্যাগ করবেন রুবিয়ালেস। কিন্তু পদত্যাগ তো করেননি, উল্টো এই ঘটনায় স্বপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন স্প্যানিশ ফুটবলপ্রধান। সেখানে বিতর্কিত চুমুকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে চুমু-কাণ্ড আলোচনায় আসার পর আরএফইএফের মাধ্যমে স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ইএফই-কে পাঠানো এক বিবৃতিতে হারমোসো শুরুতে বলেছিলেন, ঘটনাটি ‘স্নেহ ও কৃতজ্ঞতার স্বাভাবিক প্রকাশ’ ছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়ন ও নিজের এজেন্সির মাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতিতে তিনি রুবিয়ালেসের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চান।
এরপরই রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ফিফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে তাদের আপত্তিকর আচরণ ও ফেয়ার প্লে আর্টিকেল ১৩ ধারা রুবিয়ালেস লঙ্ঘন করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার কথাও জানায় বিশ্ব ফুটবলের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এই ঘটনার পর রুবিয়ালেসের পদত্যাগের দাবিতে স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী দলের ২৩ সদস্যসহ ৮০ ফুটবলার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তবে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে আরএফইএফ। এক বিবৃতিতে তারা রুবিয়ালেসের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়েছে স্প্যানিশ ফেডারেশন।
এক বিবৃতিতে ফুটবলাররা জানিয়েছে, সভাপতি রুবিয়ালেস পদত্যাগ না করলে পুরো বিশ্বকাপজয়ী দলই অবসর গ্রহণ করবে। বিশ্বকাপের ২৩ সদস্যের নারী ফুটবল দলসহ এই বিবৃতিতে সম্মতি জানিয়েছে স্পেনের ৮১ জন নারী ফুটবলার। এছাড়া পুরুষ দলের কিংবদন্তি ফুটবলাররাও এই ঘটনায় সোচ্চার হয়েছেন। স্পেনের সাবেক গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া লিখেছেন, ‘আমার কান থেকে রক্ত ঝরছে।’
ফুটবলারদের এমন দাবির বিপরীতে এক বিবৃতিতে আরএফইএফ বলছে, এই ঘটনার বিষয়ে ফেডারেশন সর্বপ্রথম জেনেছে ফুটপ্রো (পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন) ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে। নিয়ম অনুযায়ী এই বিষয়টি আরএফইএফ-এর সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। যেখানে রুবিয়ালেস বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পরবর্তীতে সেটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে সব গণমাধ্যম।
এছাড়া অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে হারমোসোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি সাড়া দেননি বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আরএফইএফ-এর দাবি, পুরো ফুটবল সমাজ রুবিয়ালেসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ সেদিন কী ঘটেছিল তা স্পষ্ট ও সহজভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে চারটি ছবিও সংযুক্ত করে দেয় আরএফইএফ। সেখানে হারমোসোকে উদ্ধৃত করে রুবিয়ালেস বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমার সম্মতি ছাড়াই সে আমাকে চুমু দিয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও তুলিনি। কেউ আমার কথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে সেটি আমার সহ্য হয় না। এমনকি আমি বলিনি এমন কোনো শব্দও যেন আমার ওপর আরোপ না করা হয়।’
পরবর্তীতে সেসব ছবির প্রতিটির নিচে ব্যাখ্যাও জুড়ে দেয় আরএফইএফ। যেখানে রুবিয়ালেসকে প্রথমে হারমোসো জড়িয়ে ধরেন এবং এরপর তাকে ওপরের দিকেও তুলে ধরেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চুমু-কাণ্ডের ঘটনায় রুবিয়ালেসকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকার। দেশটির ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রধান ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস বলেছেন, ‘সরকার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যাতে রুবিয়ালেস ক্রীড়া আদালতে তার কৃতকর্মের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন। আদালত যদি একমত হয় তাহলে এটা নিশ্চিত করছি যে রুবিয়ালেসকে আমরা নিষিদ্ধ করব।’