বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে রাজধানীর রমনার বটমূল। বর্ষবরণের মূল আয়োজনের শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ছায়ানটের শিল্পী-কলাকুশলীরা। তৈরি হচ্ছে মঞ্চ।
এদিকে, নববর্ষ-১৪৩১ বঙ্গাব্দের আগের রাতেই রমনায় ভিড় জমিয়েছেন হাজার-হাজার মানুষ। রমনায় আপন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তারা।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, রমনার গেটগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কেউ স্বামী বা স্ত্রী, কেউ বন্ধু-বান্ধব, কেউ সন্তান, কেউ প্রিয় মানুষকে নিয়ে এসেছেন এখানে। কেউ কেউ গলা খুলে গাইছেন গান।
স্ত্রীসহ রমনায় ঘুরতে এসেছেন রাজধানীর বাড্ডার বাসিন্দা শাহিদ করিম। তিনি বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ঈদের ছুটিতে স্ত্রীসহ আসলাম এখানে সময় কাটাতে। ভালোই লাগছে। আজকে আমার মতো এখানে অনেক মানুষ এসেছেন।
নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্য ইমাম বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য রাত ৮টা পর্যন্ত রমনা খোলা থাকবে। এরপর বন্ধ হয়ে যাবে। কাল বাংলা নতুন বছর। এজন্য বটমূলে মঞ্চ বানানো হচ্ছে। নিরাপত্তাও অনেক বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, বর্ষবরণের আয়োজনকে ঘিরে পুরো রমনা পার্ক এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পার্কের ভেতরে ডিএমপি, র্যাবের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।
পর্যটকদের সহায়তার জন্য রোববার ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম থাকবে, লেকে নৌপুলিশের টিম, মেডিক্যাল টিম, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, রক্তদানের বুথ থাকবে। এছাড়া, ডিএমপির পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে।
বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতাকে ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছেন পুলিশের ঊধর্বতন কর্মকর্তারা। সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম রমনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ। এ কারণে বারবার এ আয়োজনে আঘাত হানা হয়েছে, জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাই সবকিছু মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দিনটি সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা বটমূল, সংসদ ভবন এলাকা, হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে সব অনুষ্ঠান ঘিরেই ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যেসব জায়গায় অনুষ্ঠান হবে সেখানে সিসিটিভি দিয়ে পুরো এলাকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া, ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোনের মাধ্যমে আশেপাশের এলাকায় নজরদারি করা হবে। পুরো এলাকা এসবির ইক্যুইপমেন্ট ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে, এরইমধ্যে এসব কাজ শুরু হয়েছে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে, তারা মহড়া করেছে।
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, যে কোনো নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাবের স্পেশাল কমান্ডো টিম। এছাড়া সাদা পোশাকে টহল ও নজরদারির মাধ্যমে নাশকতামূলক যেকোনো কার্যক্রমসহ প্রতিরোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সবাই যেন উৎসব সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করতে পারেন সে জন্য র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বদা সজাগ রয়েছে।
সকালে ‘ছায়ানট’ এর সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের শিল্পী-কলাকুশলীরা এখন নববর্ষের অনুষ্ঠানে কাজগুলো ঠিক করে নিচ্ছেন। এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে আমরা মানুষের জয়গান করব।
‘ছায়ানট’ এর যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, এবার আয়োজনে সম্মেলক গান থাকবে ১১টি, একক গান থাকবে ১৫টি এবং পাঠ ও আবৃত্তি থাকবে।