বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদলের সংহতি

আরব-বাংলা রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ৭:০৮ am

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পুনরায় ছাত্ররাজনীতি চালুর চেষ্টার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব হাসান এ কথা জানান।

রাকিব হাসান বলেন, ‘ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।’

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাত্রদল অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রলীগের প্রাণঘাতী নির্যাতন থেকে নিস্তার পেতেই শিক্ষার্থীরা বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শহীদ আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করার পরে মুষ্টিমেয় দুই-একজন বাদে বুয়েটের সব শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও তারা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার অভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে। ছাত্রদল মনে করে, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আপাত দৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান, তার একক দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে খুনী, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, প্রশ্নফাঁসকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও টেন্ডারবাজদের অভয়ারণ্য। দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে হত্যা করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সব সীমা অতিক্রম করেছে। একইসঙ্গে দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ছাত্রদলসহ কোনো গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এই দুষ্কর্মের দায়ভার বহন করবে না।’

রাকিব হাসান বলেন, ‘শুধু বুয়েটের আবরার নয়, গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছাত্রলীগের কারণে দুজন নিরীহ শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। এ ছাড়া নিজের ধার দেওয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের আঘাতে চোখ হারিয়েছে এস এম হলের শিক্ষার্থী এহসান রফিক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের এমন পাশবিক নির্যাতনের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না।’

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালু করার পদক্ষেপ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন শঙ্কিত এই কারণে যে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তাদেরকে পড়াশোনা এবং ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং, গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরাগভাজন হলে হল থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে। বুয়েটের প্রতিটি শিক্ষার্থী আতঙ্কিত, কারণ যেকোনো মুহূর্তে তাদের যে কারো জীবনে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহীদ আবরারের মতো মর্মান্তিক পরিণতি নেমে আসতে পারে। ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা এবং একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কাকে আমরা অত্যন্ত যৌক্তিক মনে করছি। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’

রাকিব হাসান বলেন, “সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার যে কথা বলেছে, তা একটি নিষ্ঠুর প্রতারণা। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা ক্যাম্পাসে একক দখলদারিত্ব এবং ছাত্র নির্যাতনের টর্চার সেল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে ‘টোটালিটারিয়ান ভায়োলেন্ট এক্টিভিজম’ করছে। ক্যাম্পাসে ভায়োলেন্স (সহিংসতা) এবং টর্চারকে ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক।”

ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস ও হলে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে অবাধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এসবের কোনো কিছু না করে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে রাতের আঁধারে মিটিং করে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক ( ডিএসডব্লিউ) ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে। ভবিষ্যতে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলে তার দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগকে এবং বুয়েটের প্রশাসনকে বহন করতে হবে।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি) জাহাঙ্গীর প্রধান, প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ আরও অনেকে।

শেয়ার করুন

আরো
© All rights reserved © arabbanglatv

Developer Design Host BD