জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সফর নিয়ে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন মিশন প্রধান রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত। সেখানে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কর্মসূচি তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮ তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে এবারের অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। বৈশ্বিক শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সংক্রান্ত আলোচনা এবারের অধিবেশনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য প্রদান করবেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ শিডিউল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বক্তব্য প্রদান করবেন। বক্তব্যে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবেন তিনি। পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলো উঠে আসবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের পাঁচটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আহ্বানে চারটি উচ্চ সভায় অংশগ্রহণ করবেন। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দুটি হাই লেবেল সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর প্রায়োরিটি ইস্যু। এই বক্তব্য আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে একটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১টি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রধানরা দ্বিপাক্ষিক সভা করবেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফাস্ট লেডি জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, জলবায়ু পরিবর্তন, এলডিসি, এসিডি, ওআইসি, ন্যাম, বিমসটেক, জি-৭৭ বিষয়ক বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে হাঙ্গেরি এবং কাজাখাস্তানের সাথে। পাশাপাশি ঘানা, অস্ট্রেলিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে।