বৃত্তি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্র। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোরক মন্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।
অনুপস্থিত থেকেও বৃত্তি পাওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম সজিব আলী। সে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরক মন্ডল গ্রামের হুজুর আলীর ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল বের হলে উপজেলার প্রকাশিত তালিকায় তার রোল পাওয়া যায়।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফুলবাড়ী উপজেলার ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৬৫ জন শিক্ষার্থী ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করে। ওই কেন্দ্রের ১০১ নং কক্ষের ছাত্র ছিল সজিব আলী। তার প্রবেশ পত্রে ২৪ নং রোল বসানো থাকলেও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজিব আলীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে তালিকা জেলায় পাঠিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে ফুলবাড়ী উপজেলায় ৪৪ জন ট্যাল্টেপুলে এবং ৩৭ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তির তালিকা শিক্ষা অফিসে আসে। সেই তালিকা ধরে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ খোঁজ নিতে শুরু করেন কে কে এবার বৃত্তি পেয়েছে। এ সময় ফলাফল সিটে ওই ছাত্রের রোল পাওয়া গেলে হইচই পড়ে যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী সজিব বলে, ‘আমি বৃত্তি পরীক্ষাই দেইনি। আমি নিজেও জানতাম যে আমাকে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা না দিয়েও আমি কীভাবে বৃত্তি পেলাম তা বলতে পারি না।’
সজিবের বড় ভাই সবুজ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার ছোট ভাই বৃত্তি পেয়েছে। আমার ভাই বৃত্তি পরীক্ষা দেয়নি এটা ১০০ ভাগ সত্য। এখন কীভাবে বৃত্তির ফলাফলে নাম আসল সেটা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। ’
সজিবের মা সকিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে পরীক্ষা দিল না, অথচ পাশ করল কীভাবে! বিষয়টি বুঝলাম না।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চর গোরক মন্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম আলম। তিনি বলেন, ‘আমার স্কুল থেকে সাত জন পরীক্ষার্থীকে বর্ণনামূলক রোল (ডিআর ভুক্ত) করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন অনুপস্থিত। সেই অনুপস্থিত তালিকায় সজিবও রয়েছে। কিন্তু সে পরীক্ষা না দিয়েও কীভাবে বৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করলো কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আসাফুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পরে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ওই ছাত্র পরীক্ষা দেয়নি। তার রোল নম্বর কীভাবে তালিকায় এসেছে, তা পর্যাবেক্ষণ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। উপজেলা পর্যায়ে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’ এ সময় বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা অফিসার।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিষয়টি জেনেছি। গুরুত্ব সহকারে সকল নথিপত্র পর্যালোচনা করে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’