ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে ছুটছে প্রথম ট্রেন। এর মাধ্যমে পদ্মাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার পর লোকমোটিভসহ ৬টি কোচের পরীক্ষামূলক ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। আর এর মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা যুক্ত হলো রেলপথে। এতে উচ্ছ্বসিত ওই অঞ্চলের জনসাধারণ।
পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি লোকোমাস্টার হিসেবে এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে এম এ হোসেন ট্রেন চালাচ্ছেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করছেন আনোয়ার হোসেন। পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এসময় আরও উপস্থিত আছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়েল মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কর্মীরা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকৌশলী সিবলি সাদিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পাঁচটি স্টেশনই এখন প্রায় প্রস্তুত। খুঁটিনাটি যে কাজ বাকি আছে তা প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগেই শেষ হয়ে হবে। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করবেন।
সূত্র জানায়, প্রতিটি স্টেশনেই থাকছে এটিএম বুথ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকছে বিশেষ র্যাম্প। ৮২ কিলোমিটার রেলপথের ২৩.৩৭ কিলোমিটার অংশ ভায়াডাক্টের ওপর। ভায়াডাক্ট ও পদ্মা সেতুর ওপর পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র আরও জানায়, এর আগে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা-মাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। এবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এ জন্য চীন থেকে কেনা নতুন সাতটি কোচের একটি বিশেষ ট্রেন প্রস্তুত।
ঈশ্বরদীর বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আশীষ কুমার মণ্ডল বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ এই ট্রেনের পরিচালনায় অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলে দক্ষিণবঙ্গের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় কমলাপুর থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের পথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে ট্রেন পৌঁছার পর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন রেলপথমন্ত্রী। মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়, তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।