ঢাকায় সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার (সাসেল)-এর নবম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে বিএএফ বেস বাশারে হোটেল অ্যাম্পাইরিয়ানে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন। এর সায়েন্টিফিক সেশনগুলো ২-৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের লিভার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সাসেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকাতেই, ২০১৩ সালে। তারপর দীর্ঘ দশ বছর বিরতিতে ‘সাসেল’-এর সম্মেলন আবার ঢাকায় শুরু হয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, আমাদের এই অঞ্চলে লিভার চিকিৎসা ও গবেষণার প্রসারে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের বিকাশে তার সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলো তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি ন্যাসভ্যাক আবিষ্কারসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা এবং দেশে লিভারের আধুনিক চিকিৎসার প্রচলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনই ঢাকায় সাসেলের বার্ষিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেছেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার লিভার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে লিভার চিকিৎসায় সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা নিজেদের আরও শাণিত করার সুযোগ পাবেন।
‘সাসেল’-এর সভাপতি ভারতের অধ্যাপক ডা. শিব রাম প্রসাদ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের সায়েন্টিফিক কমিটির চেয়ারম্যান, জাপান প্রবাসী প্রথিতযশা চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও ন্যাসভ্যাকের অন্যতম আবিষ্কারক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান এবং ন্যাসভ্যাকের সহ-উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যপক ডা. সেলিমুর রহমান এবং রোটারিয়ান শহিদুল বারী।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি দেশে লিভার রোগীদের নিরলসভাবে সেবা প্রদান, লিভার চিকিৎসায় নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলন এবং লিভার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভূয়ষী প্রশংসা করেন।
রোটারিয়ান শহিদুল বারী জানান, বাংলাদেশের রোটারিয়ানরা এ দেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের সাথে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন তথা বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি নির্মূলে যুগপতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২৩-২৪ রোটারি বর্ষে তারা এ দেশের এক লক্ষ মানুষকে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের জন্য বিনামূল্যে গ্রিনিং কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসবেন এবং পাশাপাশি ১০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দেবেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার লিভার বিশেষজ্ঞদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে তিন শতাধিক লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল ও তুরস্ক থেকে বিশজনের বেশি লিভার বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, দেশি-বিদেশি লিভার বিশেষজ্ঞদের পারস্পরিক মতবিনিময় এবং অধিকতর সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরীতে এ সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে একটি পৃথক স্পেশালিটি হিসেবে হেপাটোলজির যাত্রা শুরু নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন আইপিজিএমআর-এ। বর্তমানে দেশে প্রায় দেড়শ’জন লিভার বিশেষজ্ঞ আছেন। এ দেশে লিভার বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে হেপাটাইটিস বি‘র নতুন ওষুধ ন্যাসভ্যাক আবিষ্কারের কৃতিত্বের অধিকারী।