শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

জনশক্তি রপ্তানি অনুপাতে বাড়ছে না রেমিট্যান্স

আরব-বাংলা রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ৭:২৫ am

জনশক্তি রপ্তানি রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ২০২৩ সালে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও রেমিট্যান্স এসেছে তার চেয়ে অনেক কম। তবে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। তাই সেখান থেকেই আসছে সিংহভাগ রেমিট্যান্স।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই এসেছে ৭১০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক। বরাবরের মতো আলোচ্য সময়ে মধ্যপ্রাচ্যেই সর্বোচ্চ পরিমাণে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালে যে সংখ্যক কর্মী বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে, সে অনুযায়ী আরও বেশি রেমিট্যান্স আসা উচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সবসময়ই বেশি রেমিট্যান্স আসে। তবে অর্থ পাচারের কারণে সেই রেমিট্যান্সের সবটুকু হয়তো ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। ফলে এসব দেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে রেমিট্যান্সও আসছে না। এক্ষেত্রে হুন্ডি প্রবণতা বা অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনেক বেশি শ্রমিক বিদেশে গেলেও সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স আসছে না বা আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ অর্থ পাচারকারীরা তা কিনছে এবং সমপরিমাণ অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। নির্বাচনের কারণে ২০২৩ সালে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স খুব বেশি বাড়েনি। অর্থ পাচার রোধে সরকার কিছুই করছে না। এমনকি ডলার সংকটের মধ্যেও জোরপূর্বক ডলারের দর কমিয়ে রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের সাত মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৪২ কোটি ৫২ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব আর তৃতীয় অবস্থানে ব্রিটেন। এ ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও বাহরাইন। অর্থাৎ রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সাতটিই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ।

চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সৌদি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ব্রিটেন থেকে ১৬১ কোটি ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৩৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ইতালি থেকে ৮৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ৮৪ কোটি ডলার, কুয়েত থেকে ৭২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, কাতার থেকে ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, ওমান থেকে ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার এবং বাহরাইন থেকে এসেছে ৩১ কোটি ১৭ লাখ ডলার।

জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মী (জনশক্তি) নিয়োগে কোটা বাড়ানো এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলে দেওয়ার ফলে জনশক্তি রপ্তানির এই রেকর্ড সম্ভব হয়েছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত বছর বিশ্বের ১৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ১৩ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। তবে জনশক্তি রপ্তানিতে মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও সে অনুযায়ী বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার। আগের বছর যা ছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি (২১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার। সে হিসেবে গত দুই বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে স্থবির হয়ে আছে।

রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল করোনার মধ্যে। মূলত তখন হুন্ডি চাহিদা তলানিতে নামায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে বেশি। কিন্তু করোনার প্রকোপ না থাকায় গত বছর ফের অবৈধ অর্থ লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়। এ কারণে দেশে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোরতায় হুন্ডি কিছুটা কমেছে। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, চলতি বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স অনেকটাই বেড়েছে। এই মাসে ২১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগে আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি আশাবাদী।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। যদিও জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ অনুযায়ী প্রবাসী আয় বাড়ছে না। রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ হুন্ডিতে। এটা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থপাচারেও এই হুন্ডি ভূমিকা রাখছে। বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারাও একমত পোষণ করেছেন। আর তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।

শেয়ার করুন

আরো
© All rights reserved © arabbanglatv

Developer Design Host BD