বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি থাকবে ছাত্র সংসদ নির্ভর।
শনিবার তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। এতদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে আসা গণরুম, গেস্টরুমসহ যাবতীয় অগ্রহণযোগ্য ও নষ্ট সংস্কৃতির দায় এই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির। ক্যাম্পাসগুলোতে চাঁদাবাজি, ফাউ খাওয়া, গ্রুপিং, সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, মাদকের বিস্তার, শিক্ষার্থী নির্যাতন ইত্যাদি অপকর্মের দায়ও দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির। গত ষোলো বছর ধরে ছাত্রলীগের এসব অপকর্ম ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। ছাত্রলীগের নির্যাতনের দুর্বিষহ স্মৃতির দগদগে ঘাঁ এখনো দুঃস্বপ্ন হয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনকে তাড়িত করে।
‘মাদার সংগঠনের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। শিক্ষার্থীদের মতামত ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতেও এসব সংগঠনের নেতৃত্ব নির্ধারিত হয় না। তাই, আমি মনে করি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে নেই।’
তিনি আরও বলেন: আবরার, হাফিজ, আবু বকর, খোকনসহ আরো অনেক রাজনৈতিক হত্যার দায় সরাসরি দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি একটি “গলিত শব”। এই “গলিত শব” থেকে নিঃসরিত পূতিগন্ধ যেন ক্যাম্পাসগুলোতে অসহনীয় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের ছাত্র সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে।
ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি থাকবে জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক জানান: তবে, ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি থাকবে ছাত্র সংসদ নির্ভর। ছাত্র সংসদ হবে ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির গ্রহণযোগ্য উপায়। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া, চাহিদা, প্রয়োজন বাস্তবায়নের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হবে ছাত্র সংসদ। শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য শিক্ষার্থীরাই গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে সুষ্ঠু ও প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে।
ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধে সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা
যোগ করেন: সবশেষে, আলোচনা ও সমালোচনার দ্বার উন্মুক্ত। ছাত্ররাজনীতির ফর্মটা সবার আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের একটি অংশ হলো ছাত্ররাজনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন। সে পরিবর্তন কেমন হবে, সে চিন্তা করা ও আলোচনা করা সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব।
শুক্রবার ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে ২২ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ক্লাসে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। শুক্রবার এলক্ষ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা।
ওইদিন শিক্ষার্থীরা দুপুরে মিছিল নিয়ে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় জড়ো হন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাস পলিটিক্স, নো মোর নো মোর’, ‘দলীয় রাজনীতির ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘হলে হলে খবর দে, ছাত্র রাজনীতির কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যতম ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করে।