যে সরকারি কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের দালালি করবেন, তাদেরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে। এমনটি বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
ডিসি-এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দেশ আওয়ামী লীগের জমিদারি নয়। দেশের মালিক জনগণ। তাই শেখ হাসিনার নির্দেশে আপনারা দিনের ভোট রাতে করবেন, আবার বুক ফুলিয়ে বলবেন, আমরাই তো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি, ভাববেন না এভাবে দিন যাবে। আপনাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কোনো ছাড় নেই। যারা আওয়ামী লীগের দালালি করবেন, তাদেরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির- এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি।
সমাবেশে সালাম বলেন, শেখ হাসিনা কদিন আগে বলেছিলেন, আমেরিকা যাবেন না। কিন্তু গতকাল গিয়ে হাজির হয়েছেন। এজন্যই বলে আওয়ামী লীগ ভুয়া। তাদের কথার কোনো ঠিক নেই। সকালে বলে এক কথা, রাতে বলে আরেক কথা।
তিনি বলেন, এই দেশের ১২টা বাজিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই দেশের অর্থনীতির ১২টা বেজে গেছে। বিদ্যুৎ ও পদ্মা সেতুর নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এই সরকার সামান্য ডেঙ্গু সামাল দিতে পারে না। ডেঙ্গুর কামড়ে মানুষ মরছে। যদিও শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে কামড়ায়নি। কামড়ালে বুঝ তো ডেঙ্গু কী।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এই আহ্বায়ক আরও বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এখনো সময় আছে। দুটি পথ হাসিনার সামনে খোলা। একটি হলো, ওবায়দুল কাদের যেটি বলেছে, যদি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতা যায়, বিএনপি ক্ষমতায় আসে, এক রাতের মধ্যেই নাকি আওয়ামী লীগ শেষ। আপনি যা বলেছেন, সত্যিই বলেছেন। আরেকটি পথ হলো বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে হাত-পা ধরে মাফ চান। খালেদা জিয়াকে ছাড়ুন, তারেক রহমানের মামলা উঠিয়ে নিন। খালেদা জিয়াকে বলুন, আপনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দেবেন, নির্বাচনের আগে যাতে আপনাকে জেলে না দেয়।
তিনি বলেন, সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টে নিয়ে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শত শত মামলা, শত শত বছর তাকে জেলে থাকতে হবে। জেলের রাস্তা তো আপনিই (শেখ হাসিনা) দেখিয়েছেন। যেই রাস্তায় খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছেন, সেই রাস্তায় আপনাকেও জেলে যেতে হবে।
সালাম বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় আছেন। আবার শখ হয়েছে, তিনি (শেখ হাসিনা) জোর করে ক্ষমতায় থাকবেন। যদি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চান, এই দেশের জনগণ জোর করে আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জীবনভর আন্দোলন করেছে। মনে হয় তারা কোনো গাড়িতে আগুন দেয়নি, কোথাও ঢিল মারেনি, তারা খালি রাস্তায় রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এই আওয়ামী লীগ, এই জামায়াত ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। হোটেল শেরাটনের সামনে বাসের মধ্যে গানপাউডার দিয়ে আগুন দিয়ে মানুষ জ্বালিয়ে দিয়েছে। সচিবালয় থেকে কর্মকর্তা বের হওয়ার পর উলঙ্গ করে দিয়েছে। তারা নাকি কিছু করেনি। যদি ক্ষমতা না ছাড়েন, তাহলে আন্দোলনের নামে আপনারা যা যা করেছেন, আমরাও তাই তাই করব রাজপথে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পাশে চোর, বাটপার, ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার মার্কেট লুটেরা ছাড়া আর কেউ নেই। এই লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচতে হলে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। শেখ হাসিনা জোর করে নির্বাচনে জিততে চান। জোর করে আর বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। সংগ্রাম ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির পরিবার ও কল্যাণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।