আফগানিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালিবান। গোষ্ঠীটির দাবি, এই ধরনের কার্যকলাপ ইসলামী আইন বা শরিয়া বিরোধী।
পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে কাবুলে ক্ষমতায় ফিরে আসার দ্বিতীয় বার্ষিকী পালন করার একদিন পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। বুধবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সংবাদ সম্মেলন করে তালেবানের বিচারমন্ত্রী আবদুল হাকিম শারাই এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। সেখানে এই পদক্ষেপের বিশদ বিবরণ না দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক দল পরিচালনা করার কোনও শরিয়া ভিত্তি নেই। তারা জাতীয় স্বার্থে কাজ করে না, দেশবাসীও তাদের পছন্দ করে না।’
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরে আসে কট্টরপন্থি এই দলটি। মূলত সেসময় যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশ থেকে মার্কিন সেনাদের বিশৃঙ্খলভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে ক্ষমতা দখল করে তারা। তবে দুই বছর আগে তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগপর্যন্ত ৭০টিরও বেশি বড় ও ছোট রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের বিচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত ছিল।
ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিরোধী ও সমালোচকদের দাবিয়ে রাখার জন্য সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে ক্রমাগতভাবে খর্ব করে এসেছে তালেবান। মূলত তারা কেবল তাদের সমর্থকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার অনুমতি দিয়ে থাকে।
কট্টরপন্থি এই গোষ্ঠীটি দারিদ্র-পীড়িত আফগানিস্তানে ইসলামী আইনের কট্টর ব্যাখ্যা জারি করেছে। তারা ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া এবং অধিকাংশ আফগান নারীকে তার কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও প্রকাশ্য জীবন যাপন করা থেকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এছাড়া আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যমগুলোও ধারাবাহিকভাবে তালেবানের আক্রমণ ও দমন-পীড়নের মুখে রয়েছে। আর এর ফলে বহু সংবাদমাধ্যম ও নিউজ আউটলেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং শত শত সাংবাদিক দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
আফগানিস্তানের ক্রম-অবনতিশীল এই মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের অন্যান্য নজরদারি সংস্থাগুলো। একইসঙ্গে নারী ও সুশীল সমাজের স্বাধীনতার ওপর জারি করা বিধিনিষেধও প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এসব সংস্থা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সশস্ত্র এই বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর দেশটির রাজনৈতিক দলের বহু নেতা এবং রাজনীতিবিদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। মূলত তাদের আশঙ্কা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সাবেক সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে তারা হয়তো তালেবানের প্রতিশোধের মুখে পড়তে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০ বছর পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
আর এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
আর তাই আফগানিস্তান বর্তমানে মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং এশিয়ার এই দেশটির ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। এছাড়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং তালেবান প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
অবশ্য তালেবান প্রশাসন দাবি করছে, তারা ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা অনুসারে নারীর অধিকারকে সম্মান করে। তবে কাবুলে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের পর থেকে তালেবান গোষ্ঠী নারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছে। যার মধ্যে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করা থেকে বেশিরভাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ করার মতো পদক্ষেপও রয়েছে।
আর এর মধ্যেই এবার আফগানিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করল তালেবান।