যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হেনেছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় হিলারি। অঙ্গরাজ্যটির ৮৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মকালীন ঝড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। নেভাদায় পুরোদমে আঘাত হানার আগে ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল, রাস্তাঘাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে ঝড়টি। আজ সোমবার (২১ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়টির জেরে ক্যালিফোর্নিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে রাজ্যটির গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। এসব এলাকায় আজ সকাল পর্যন্ত আকস্মিক বন্যা সতর্কতা কার্যকর ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের লস অ্যাঞ্জেলস শাখা থেকে বলা হয়েছে, রাতারাতি এই অঞ্চলে দৈনিক বৃষ্টিপাতের একাধিক রেকর্ড ভেঙে গেছে।
এদিকে, ঝড় আঘাত হানার আগে দুশ্চিন্তায় থাকা ক্যালিফোর্নিয়াবাসী আরও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। পাঁচ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে গোটা রাজ্যটি। তবে, এতে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি।
এএফপি জানিয়েছে, হিলারি থেকে সৃষ্ট অতিবৃষ্টিতে বন্যার দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে রাস্তা। হাইওয়েগুলো নদীতে রূপান্তরিত হয়েছে। রাস্তায় কিছু গাড়িচালক আটকা পড়েছে। সান দিয়েগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, পাসাডেনা ও পামডেলসহ বেশ কয়েকটি শহরের স্কুল বন্ধ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) তথ্যানুযায়ী, দেশটির স্থানীয় সময় আজ সকালে হিলারির প্রধান কেন্দ্রস্থল নেভাদায় ছিল। ধারণা করা হয়, তাণ্ডব চালিয়ে খুব দ্রুত ওই এলাকা ছাড়বে হিলারি। পাশাপাশি ঝড়টির প্রভাবে ওরেগন ও আইডাহো রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে জীবননাশক হুমকি ও বিপর্যয়কর বন্যা প্রত্যাশিত ছিল। ঝড়টি শক্তিশালী দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ৩৫ মাইল (৫৫ কিলোমিটার) বেগে চলছে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) একটি সহযোগী সম্প্রচার মাধ্যম ক্যালিফোর্নিয়ার প্লাম স্প্রিংস শহরের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে শহরটির বিভিন্ন রাস্তায় পানি দেখা যায়। শহরটিতে জরুরি পরিষেবা নম্বর ৯১১ এর বিভ্রাটের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। পার্শ্ববর্তী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন বা থানায় ভুক্তভোগীদের যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, প্লাম স্প্রিংস শহরে রোববার রেকর্ড তিন দশমিক এক ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ১৯৩০ সালে শহরটিতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ওই সালের একদিনে শহরটিতে সর্বোচ্চ দুই দশমিক শূন্য তিন ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছিল।
এএফপি বলছে, হিলারি আঘাত হানার আগেই সমুদ্র সৈকতগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা সুপেয় পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুতের জন্য দোকানে ছুটে গিয়েছিলেন। কিছু কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা, এমনকি টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
ঝড়টি দুর্বল হলেও এখনও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ)। সংস্থাটির প্রশাসক ডিন ক্রিসওয়েল জনগণকে বিপদগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ঝড়টির গুরুতর প্রভাব ও হুমকি নিয়ে সতর্কও করেছিলেন তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের কার্যালয় জানিয়েছে, ঝড়ের জন্য কর্তৃপক্ষ পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে এবং সাড়ে সাত হাজারের বেশি উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে।
বন্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সান দিয়েগোর বাসিন্দারা। সম্ভাব্য বন্যার জন্য বালির ব্যাগ ভর্তি করে রেখেছে তারা। আর লাইফগার্ডরা মানুষদের সমুদ্র থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছে।