লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে কিন্ডারগার্টেন থেকে চুরি হওয়া ৯ মাস বয়সী শিশু মালিহা ইসলাম ওহি তার মায়ের কোলে ফিরেছে। রাতের অন্ধকারে খালি গায়ে পুরোনো কম্বল পেঁচিয়ে একটি গ্রামীণ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় চোর। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টার দিকে পুলিশ শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়। শিশুটি এখন তার মাসহ স্বজনদের কোলে খেলা করছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিশুটির বাড়িতে গেলে এমনটাই জানিয়েছেন তার মা মরিয়ম বেগমসহ স্বজনরা। শিশুটিকে পেয়ে পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা। একই সঙ্গে ওই চোরকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কমলনগরের হাজিরহাট উপকূল কলেজের দক্ষিণের একটি কাঁচা রাস্তার পাশে খালি গায়ে একটি পুরোনো কম্বল পেঁচিয়ে ওহিকে ফেলে রেখে যায় চোর। ওই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার মো. ইউছুফ বাড়ি যাচ্ছিলেন। হঠাৎ শিশুটিকে দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে শিশুটিকে কোলে নেয়। তারা তাকে জামা পরিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওহিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। তবে চোরকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
ওহির মা মরিয়ম বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ ওহিকে উদ্ধারে সহযোগিতা করেছেন। ওহির জন্য অনেক পুলিশ সদস্যেরও চেহারা মলিন ছিল। ওহি উদ্ধারের আগেও থানা থেকে এসেছি। ওহি উদ্ধারের পর থানায় গিয়ে দেখি সবার মুখে হাসি। একেকবার একেকজন তাকে কোলে নিচ্ছেন। ওহিকে আমি ফিরে পেয়েছি, এটি সবচেয়ে বড় আনন্দের। তবে যে ওহিকে চুরি করে আমার চোখের পানি ঝরিয়েছে, পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তাকে দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কমলনগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল জলিল বলেন, শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি। চোরকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, ওহি সদর উপজেলার তেওয়ারীঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের আবুধাবি প্রবাসী মো. সেলিমের মেয়ে। তার বড় বোন সাবিহা ইসলাম মিহি (৬) অগ্রণী রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি শ্রেণির ছাত্রী। তার মা মরিয়ম ওই বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে মিহি যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এতে ওহিকে নিয়ে তার মা মরিয়মও বিদ্যালয়ে যান। মিহিকে সাজানোর জন্য চুলের ক্লিপ ও বেল্ট আনার জন্য বিদ্যালয়ের পাশেই বাজারে যান মরিয়ম। এ সময় জোর করে মায়া নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী ওহিকে তার কাছে রেখে দেয়। মায়া সম্পর্কে মরিয়মের ফুফাতো বোন। এর মধ্যেই মায়ার কোল থেকে অচেনা এক নারী ওহিকে নিয়ে যায়। বাজার থেকে ফিরে ওহির কথা জিজ্ঞেস করলে মায়া জানায় ওহি অন্য একজনের কোলে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর ওহিকে আনতে বললে জানায়, অন্য এক নারী ওহিকে কোলে নিয়েছে। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যালয়ের সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা যাচাই করে দেখতে পায় মাথায় লাল হিজাব, মুখে মাস্ক ও কালো বোরকা পরিহিত এক নারী শিশুটিকে কোলে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা যাচাই করেও একই দৃশ্য দেখা যায়।